বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গুরুতর সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতার কারণে ইলেক্টিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়, সাম্প্রতিক পরীক্ষায় তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া ও একাধিক অঙ্গের জটিলতা দেখা দিয়েছে। কিডনির কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ডায়ালাইসিসও শুরু হয়েছে। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানায়, খালেদা জিয়াকে উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ২৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ২৭ নভেম্বর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়। মেডিকেল বোর্ড সবাইকে তার চিকিৎসা নিয়ে অনুমান বা ভুল তথ্য প্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘নির্বাচনি যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, জনগণের কাছে বিএনপির বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে এবং বিভ্রান্তি রোধে ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, ধানের শীষের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হবে এবং দলীয় প্রতীককে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা চালাতে হবে। তারেক রহমান সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন যত সহজ ভাবা হচ্ছে, বাস্তবে তা তত কঠিন হবে। গণতন্ত্র ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীকে সক্রিয় হতে হবে। অনুষ্ঠানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভই এখন বিএনপির প্রধান লক্ষ্য, যা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য নির্ধারক হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ১৬ মাস পর বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। দুটি ভোট একসঙ্গে আয়োজনের কারণে ভোটগ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ভোট চলবে। ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে ইসি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২১ নভেম্বর গঠিত নতুন কমিশনের অধীনে এটিই প্রথম জাতীয় নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন, যেখানে ইতিমধ্যে তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এই নির্বাচন নতুন কমিশনের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন নাগরিক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, এবার সারাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোটগ্রহণের জন্য ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসির চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং হিজড়া ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন। ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, যারা ২০২৫ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তারাই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এবারই প্রথম এক বছরে তিনবার ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে নির্বাচন কমিশন। বিশাল এই ভোটার তালিকা আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছেন। একই দিনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১২ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত, যাচাই-বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি এবং ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। সিইসি জানান, এবার সারাদেশে ৩০০ আসনে ভোট হবে এবং এটি হবে “গণতন্ত্রের উৎসব”। মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি, যার মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। ইতিমধ্যে ৩ লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একই দিনে গণভোট ও নির্বাচন আয়োজন প্রশাসনিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক ভোটের প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীদের সব ধরনের প্রচার সামগ্রী—ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড ও আলোকসজ্জা—৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসীর উদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ভোটগ্রহণ ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ১০ ডিসেম্বর ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রচার সামগ্রী অপসারণের দায়িত্ব প্রার্থীদের নিজেদের। নির্দেশনা বাস্তবায়নে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১২ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত, যাচাই-বাছাই ও আপিল প্রক্রিয়া চলবে জানুয়ারি মাসজুড়ে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি প্রথম জাতীয় নির্বাচন। একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন প্রশাসনিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) থেকে দেশের প্রতিটি উপজেলা ও থানায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইসি’র উপ-সচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে জানান, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে ভোটগ্রহণের দুই দিন পর পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলা ও থানায় অন্তত দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধ, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নির্বাচনি পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটি নির্বাচনি স্বচ্ছতা ও ন্যায়সংগততা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে চলমান বিরোধ মেটাতে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিএনপি। আগামী শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণফোরামের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকটি এমন সময় আহ্বান করা হয়েছে যখন বিএনপি ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যা নিয়ে মিত্রদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি মিত্রদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। তারা দ্রুত ন্যায্য সমাধান চান, যাতে বিরোধের নেতিবাচক বার্তা না যায়। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, দলটি মিত্রদের সঙ্গে ঐক্য অটুট রাখতে চায় এবং অবশিষ্ট ২৮টি আসনের বেশির ভাগই শরিকদের জন্য বরাদ্দ রাখবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শনিবারের বৈঠক বিরোধ মেটানো ও বিরোধী জোটের ঐক্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। দলের মুখপাত্র এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বলেন, তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। তিনি জানান, জামায়াতসহ আট দল গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী করতে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে এবং শিগগিরই জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, যাচাই-বাছাই চলবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি এবং ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু হবে, যা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের এই প্রতিক্রিয়া নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিলেও গণভোটে তাদের সক্রিয় ভূমিকা রাজনৈতিক ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ঘোষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই ঘোষণা জনগণকে আশ্বস্ত করেছে এবং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করবে এবং এর মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সিইসি ঘোষণায় জানান, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ তারিখে ৩০০ আসনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং একই সঙ্গে ২০২৫ সালের সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশের ওপর গণভোট নেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর, যাচাই-বাছাই চলবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তফশিল ঘোষণাকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের পর উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে দেওয়া হয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, আর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন আদিলুর রহমান। বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম পদত্যাগপত্র জমা দেন। গত বছর আগস্টে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এর আগে আসিফ মাহমুদকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শ্রম ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পুনর্বণ্টন আসন্ন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা। নতুন দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ধারাবাহিকতা ও কার্যকারিতা রক্ষায় মনোযোগী হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তিন ভারতীয় নাগরিককে আটক করেছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। বুধবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করা হয় এবং বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আটক ব্যক্তিরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতি জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন জেমস কুমার রিয়াং (৩৩), তরসেন রিয়াং (৩০) ও লাল থাকমা রিয়াং (৩২)। তারা শনিবার ত্রিপুরার ধলাই জেলার রইশ্যাবাড়ি থানার চপলিং ছড়ার চোরাপথ দিয়ে খাগড়াছড়ির রুপসেনপাড়া এলাকায় প্রবেশ করে। বুধবার ভারতে ফেরার সময় যৌথবাহিনীর চেকপোস্ট দেখে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিনা পাসপোর্টে বাংলাদেশে প্রবেশের কথা স্বীকার করে। তাদের কাছ থেকে আধার কার্ড, মোবাইল ফোন ও টাকা জব্দ করা হয়েছে। পানছড়ি থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত টহল বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর অন্যায্য দাবি নিয়ে সড়কে নামলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, তফশিল ঘোষণার পর কোনো ধরনের আন্দোলন বা কর্মসূচি সহ্য করা হবে না। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় দুই হাজার আন্দোলন হয়েছে, তবে কোথাও রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়নি; কেবল টিয়ারশেল ও গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়েছে। তফশিল ঘোষণার পর যারা আন্দোলনে নামবেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শফিকুল আলম বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে জালিয়াতি বেড়ে গেছে এবং এতে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রোরেলে যাত্রীদের জন্য ব্যাগ বহন ও নিষিদ্ধ দ্রব্যের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে। নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে ব্যাগের দৈর্ঘ্য ২২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৪ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৯ ইঞ্চির মধ্যে এবং ওজন ১৫ কেজির বেশি না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাকপ্যাক পিঠে নয়, হাতে বহন করতে হবে এবং প্লাস্টিক বা পাটের বস্তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে জীবন্ত প্রাণী, কাঁচা মাছ-মাংস, রসালো ফল, খোলা খাবার, ধারালো জিনিস, বড় মেশিন, দাহ্য পদার্থ, বিস্ফোরক, কিছু ইলেকট্রনিক্স ও বাদ্যযন্ত্র। তবে সিল করা পানির বোতল, ল্যাপটপ ব্যাগ, প্যাকেটজাত খাবার ও ছোট শপিং ব্যাগ অনুমোদিত। ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব নিয়ম দুর্গন্ধ, নোংরামি ও দুর্ঘটনা রোধে নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তালিকা হালনাগাদ করা হবে। যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশের আগে ব্যাগ পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ঘোষণা করেছেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে গণভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। ১১ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি বলেন, এই নির্বাচন দেশের সক্ষমতা ও ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। এবার প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশি ও কারাবন্দিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সিইসি সতর্ক করে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে নারীদের হেয় করা হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১২ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত, যাচাই-বাছাই ও আপিল জানুয়ারি মাসে সম্পন্ন হবে। ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রচারণা চলবে। ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটিই প্রথম জাতীয় নির্বাচন। একদিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনকে নতুন সরকারের জন্য বড় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরো ফিড দেখতে লগইন করুন।